Hero Image

বৃষ্টিপাত ও চাষবাস, সেচের উন্নতিতে চাষির বর্ষার ওপর নির্ভরতা কমছে

গত সোমবার ২০২৪-এর দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষা বিষয়ে প্রথম পূর্বাভাস জানাল মৌসম ভবন। জানা গেল, এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টি বেশি হবে, অনুমান অনুসারে ১০৬%, দীর্ঘ পর্বের গড়ে ৮৭ সেমি। খারিফ শস্যের মরসুমের পক্ষে তা সুখবর। গত বছর স্বাভাবিক চেয়ে কম বৃষ্টি এবং তা-ও মাসিক হিসেবে অত্যন্ত এলোমেলো হওয়ার ফলে এর ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেচের প্রসারের ফলে যদিও ভারতের কৃষিজ উৎপাদন এখন আর বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ওপর ততখানি নির্ভরশীল নয়।
যেমন ধানে প্রচুর জল লাগে, কিন্তু ২০০০ সাল থেকে তথ্য বলছে যে শুধু ২০০২ আর ২০০৯-এ বৃষ্টি খুব কম হওয়ায় উৎপাদন অনেকটা কমেছিল। এই দুই ধাক্কা বাদ দিলে উৎপাদন মোটামুটি বেড়েছে, স্বাভাবিক চেয়ে কম বৃষ্টির বছরে ফলন খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও। ক্ষমতাবৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ, সেচে নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জল নিষ্কাশনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। নলকূপের মাধ্যমে সেচ এখন মোট সেচের ৬০%। এই সেচের ফলে, বৃষ্টিপাত কমলেও শস্য উৎপাদনে সমস্যা অনেক দূর রুখে দেওয়া গেছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিতে দেখলে চাষবাসে দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষার প্রভাব এখনও কমেনি।
এর কারণ, সেচে ভূগর্ভস্থ তোলা তখনই নিয়মিত ভাবে সম্ভব, যখন তা প্রয়োজনমতো পূরণ হয়ে যায়। আর, বার্ষিক পূরণের ৭৫%-ই দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষার সময়ে হয়ে থাকে। জাতীয় স্তরে ভারত ভূগর্ভস্থ জল পূরণযোগ্য ভাবেই ব্যবহার করছে। বার্ষিক নিষ্কাশনযোগ্য ভূগর্ভস্থ জলের মাত্র ৫৯% ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু, এই জাতীয় গড় কিছু উদ্বেগজনক আঞ্চলিক গড়ের হিসেব ঢেকে দেয়। ভারতের সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জাব ও হরিয়ানা। এই দুই রাজ্যের ভূগর্ভস্থ জল নিষ্কাশন পূরণযোগ্যতাকে অনেকটা ছাপিয়ে গেছে।
২০২২-এ পাঞ্জাবের বার্ষিক ভূগর্ভস্থ নিষ্কাশন ও মোট বার্ষিক ভূগর্ভস্থ নিষ্কাশনের অনুপাত ছিল ১৬৪.১৫%। হরিয়ানায় সেই অনুপাত ১৩৬%। উত্তরপ্রদেশে তা ৭১%, তবে চাষবাসের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ক্রমশ পূরণযোগ্যতা ছাপিয়ে যেতে চলেছে। মৌসম ভবনের এবারের পূর্বাভাস ভূগর্ভস্থ জলের আধার পূরণ করার পক্ষে সদর্থক। কিন্তু এ-ও স্মর্তব্য যে, ভারত তার কৃষিক্ষেত্রের ভাগ্যটিকে জলবায়ু পরিবর্তনের হাতে সঁপে দিয়েছে। বৃষ্টি ও জল তোলার প্রশ্নে আঞ্চলিক ফারাক শস্য উৎপাদনে অত্যন্ত জরুরি।
ঘটনা হল, চাষের দিক থেকে সবচেয়ে ফলবান অঞ্চলের অনেকগুলিই ফলনের প্রশ্নে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের অদলবদল থেকে নিজেদের সুরক্ষিত করতে পারলেও বর্ষার ওপর নির্ভরযোগ্য কমাতে পারেনি।

READ ON APP