Hero Image

ইরানের জনতা খুশি তো? পশ্চিম এশিয়ায় ফের ক্ষমতা জাহির

ইজ়রায়েলের উপর ইরানের মিসাইল ও ড্রোন হামলা আবারও পশ্চিম এশিয়ায় তেহরানকে শক্তিশালী ক্ষমতা হিসেবে প্রমাণ করল শুধু নয়, পশ্চিম এশিয়ায় নিরাপত্তার অন্যতম সমস্যা হিসেবেও চিহ্নিত করল। পশ্চিম এশিয়ায় অশান্তি তৈরির জন্য তেহরানকে দায়ী করার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। হেজবুল্লাহ থেকে হুথি সশস্ত্র বাহিনীকে ইরান নিজের স্বার্থে পশ্চিম এশিয়ায় অশান্তি তৈরিতে মদত জোগাচ্ছে, সে কথা অস্বীকার করা যায় না।
দেশের অভ্যন্তরে আয়াতোল্লাহ শাসন রীতিমতো বজ্র আঁটুনি বজায় রেখেছে, ইসলামের নামে চূড়ান্ত রক্ষণশীলতা কায়েম করা হয়েছে সেখানে, ইরানি নারীদের ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে দিনের পর দিন। এই চিত্রটি নেহাতই সাম্প্রতিক। কিছু দিন আগে অবধিও ইরানের সমাজ ও শাসনের চরিত্র এমন ছিল না। রক্ষণশীল শাসন কায়েম না থাকলে আধুনিকতার অংশীদার হিসেবে ইরান এই মুহূর্তে পৃথিবীর অন্যতম ক্ষমতাকেন্দ্র হতে পারত। বস্তুত ইরানের ইতিহাসে ১৯৫৩ সালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেগের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান হয়।
তার পিছনে সিআইএ-র মদত ছিল। সেটি ইরানের গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙ্ক্ষার উপর বিরাট ধাক্কা ছিল। মোসাদ্দেগ সেই সময়ে ইরানে নানা সংস্কার করছিলেন, যাতে ইরান অধিকার ভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। কিন্তু তা সফল হল না। ক্ষমতায় বসলেন শাহ মোহাম্মদ রেজা পহলভি, শুরু হল তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন। তা-ই ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের রূপ পেল, এবং শেষ পর্যন্ত আয়াতোল্লাহ শাসন কায়েম হল আবার। এর পর ৪০ বছর ধরে পশ্চিমি দেশগুলি ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ জারি রাখে। কিন্তু তাতে ইরানের অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি।
সৌজন্যে, ইরানের অভ্যন্তরেই ড্রোন ও মিসাইল বানানোর ব্যবস্থা, পরমাণু প্রকল্প ও তেল রপ্তানি। ইরানের জনসংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। তাঁদের মধ্যে বহু মানুষই পশ্চিমি শিক্ষায় সর্বোচ্চ শিক্ষিত। ফলে মানবসম্পদের ঘাটতি নেই ইরানে। ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তির ফলে আবারও বিশ্ব রাজনীতিতে ইরানের অবস্থান ‘স্বাভাবিক’ হয়। কিন্তু পরে ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পরে আবার ইউএস ইরানের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ শুরু করে। তাতে সমর্থন ছিল ইজ়রায়েল ও সৌদি আরবের। এতে হয়তো আয়াতোল্লাহ-রা খুশিই হয়েছিলেন।
কিন্তু ইরানি জনগণের কি কোনও লাভ হয়েছে তাতে? হয়নি। তাতে ক্ষমতাসীন সরকারেরও কিছু যায় আসেনি। পশ্চিম এশিয়ায় হাজারো সমস্যার মধ্যে নতুন সমস্যা আকারে হাজির তারা। সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?

READ ON APP