Hero Image

ইভিএম ও সংশয়ের মেঘ, গণতন্ত্র দাঁড়িয়ে থাকে ভোটদাতাদের বিশ্বাসের ওপর

বিশ্বাসের প্রশ্নটা সহজ নয়। ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অখণ্ডতায় তো নয়ই। সুপ্রিম কোর্ট ফের সেই প্রশ্ন তুলল। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শীর্ষ আদালতের বারংবার হস্তক্ষেপেও তাতে সংশয়ের মেঘ দূর হয়নি। দেশ আপাতত আরও একটি প্রচেষ্টার অপেক্ষায়।২০০৪ লোকসভা ভোটে ইভিএম চালু হয়। অতঃপর অনেক সরকার বদলেছে, সাধারণ ভাবে ইভিএমকে পেপার ব্যালট থেকে উন্নতি হিসেবেই দেখা হয়েছে।
তাই ব্যালটে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাবটি যথার্থ ভাবেই খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এর পর ইভিএম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেল’ (ভিভিপ্যাট)। ভোটার যে বোতাম টিপেছেন সেখানেই ভোট পড়ল কি না, এর মাধ্যমে তা দেখে নেওয়া যায়। পরবর্তী কালে সন্দেহ নিরসনেও এই কাগজের তালিকা জরুরি। ‘সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বনাম ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র’ মামলায় (২০১৩) সুপ্রিম কোর্ট ভিভিপ্যাট চালুর নির্দেশ দেয়। তাদের যুক্তি ছিল, এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অপরিহার্য অংশ। ভোটাদাতারা যাতে নির্বাচনের অখণ্ডতা নিয়ে যথেষ্ট নিঃসংশয় হতে পারেন, সে জন্য এই হস্তক্ষেপ।
যদিও এখনও পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক থামেনি। তা অগ্রাহ্যও করা যায় না, কারণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভোটদাতাদের বিশ্বাস গণতন্ত্রকে ধরে রাখে। ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে ‘চন্দ্রবাবু নাইড়ু বনাম ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র’ মামলার সূত্রে আরও একবার হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রতি আসনে ৫০% ভিভিপ্যাট যাচাইয়ের আবেদনের জবাবে পরিসংখ্যানগত কারণ দেখিয়ে বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশন।কমিশনকে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট জানিয়েছিল, এলোমেলো ভাবে ৪৭৯টি ইভিএম যদি ভিভিপ্যাট মেলানোর জন্য বেছে নেওয়া হয়, তা হলে ৯৯% ফলাফল যথাযথ হবেই।
কমিশন বলেছিল, তারা ইতিমধ্যেই তার আট গুণ বেশি যাচাই করছে। আবারও ভোটদাতাদের আস্থা অর্জনে ভিভিপ্যাট যাচাই পাঁচ গুণ বাড়াতে বলে আদালত। কমিশন জানায়, ভিভিপ্যাট যাচাই করার সংখ্যা বাড়ালে ফল বেরোতে দেরি হবে। কিন্তু, সময় এখন প্রাসঙ্গিক বিষয় নয়। কেননা, ২০০৪ সালে লোকসভা ও চারটি বিধানসভার ভোট হয়েছিল তিন সপ্তাহের সামান্য বেশি সময়ে। এবার ভোটে সময় লাগবে ছ’সপ্তাহের সামান্য বেশি। ২০২০ নির্বাচনের ফলাফলে বিশ্বাসভঙ্গের পরে ইউএস-এর সমাজ এখন গভীর ভাবে বিভাজিত। ভারতের সেই পথে যাওয়া সমীচীন নয়।
কিন্তু সংশয় দূর করতে ২০১৩-এ ভিভিপ্যাট চালু করলেও কতখানি যাচাই প্রয়োজন তা এখনও ঠিক করা যায়নি। যাচাইয়ের সংখ্যা বাড়ানো যায় কি না, তা কমিশনের বিবেচনা করা উচিত।

READ ON APP